সহজে শিখি সমাস | কর্মধারয় সমাস ও তৎপুরুষ সমাস (Karmadharoy, Tatpurus Somas)

Spread the love

বাংলা ব্যাকরণের মধ্যে কর্মধারয় সমাস (Karmadharoy Somas) ও তৎপুরুষ সমাস (Tatpurus Somas) হলো সমাসেরই দুইটি আলাদা আলাদা প্রকার। সমাসের মোট ছয়টি প্রকার আছে যেগুলোর বিষয়ে আমরা আমাদের Somas Tutorial Series এর প্রথম টিউটোরিয়ালটিতে পড়েছিলাম যার মধ্যে আমরা সমাস কি তা বিস্তারিতভাবে জেনেছিলাম, একইসঙ্গে সমাসের বিভিন্ন অংশ যেমন ব্যাসবাক্য, সমস্তপদ, সমস্যমানপদ, পূর্বপদ উত্তরপদ ইত্যাদির বিষয়েও পড়েছিলাম এবং সমাসের বিভিন্ন প্রকারে বিষয়েও সংক্ষিপ্ত ধারণা পেয়েছিলাম। এরপর সমাস টিউটোরিয়াল সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টিউটোরিয়ালগুলোতে আমরা যথাক্রমে দ্বন্দ্ব ও অব্যয়ীভাব সমাস এবং দ্বিগু ও বহুব্রীহি সমাসের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে পড়েছিলাম। 

আজকের এই টিউটোরিয়ালটি হলো সমাস টিউটোরিয়াল সিরিজের চতুর্থ টিউটোরিয়াল এবং এই টিউটোরিয়ালটিতে আমরা সমাসের ছয়টি প্রকারের মধ্যে কর্মধারয় সমাস ও তৎপুরুষ সমাসের (Karmadharoy Somas and Tatpurus Somas) এই দুইটি প্রকারের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো, বুঝবো এবং শিখবো। তবে সমাসের সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা না থাকলে আজকের টিউটোরিয়ালটি কোনোভাবেই বুঝে ওঠা সম্ভবপর নয় তাই তোমাদের মধ্যে যারা এখনো সমাসের প্রথম টিউটোরিয়াল আর্টিকেলটি এখনো পড়ো নি তারা এই লিংকে ক্লিক করে আগে সেটা পড়ে নাও, কারণ ওই টিউটোরিয়ালটি পড়ে নিলে আজকের এই টিউটোরিয়ালটি খুব সহজেই তোমরা বুঝে নিতে পারবে। 

তৎপুরুষ সমাস (Tatpurus Somas)

তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।

উদাহরণস্বরূপ —
   

১. রথকে দেখা  = রথদেখা (এখানে এর পূর্বপদ “রথ” এর সঙ্গে বিভক্তি “কে” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর এই সমাসটিতে এর পরপদ “দেখা” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “রথদেখা” বললে পূর্বপদ “রথ” কে বুঝি না, “রথদেখা” বললে আমরা এর পরপদ “দেখা” কেই বুঝি, রথ না দেখলে কেউ রথদেখা বলে না তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।)     

২. বিশ্বে বিখ্যাত = বিশ্ববিখ্যাত (এখানে এর পূর্বপদ “বিশ্ব” এর সঙ্গে বিভক্তি “এ” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর এই সমাসটিতে এর পরপদ “বিখ্যাত” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “বিশ্ববিখ্যাত” বললে পূর্বপদ “বিশ্ব” কে বুঝি না, “বিশ্ববিখ্যাত” বললে আমরা এর পরপদ “বিখ্যাত” কেই বুঝি, “বিশ্ববিখ্যাত” বলতে আমরা সারা বিশ্বকে বুঝি না, আমরা এখানে এমন কোনো মানুষকে বা কোনো জিনিসকে বুঝি যে সারা বিশ্বে বিখ্যাত তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।)

তৎপুরুষ সমাসের প্রকার (Types of Totpurus Somas)

তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তি অনুসারে তৎপুরুষ সমাসকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এই ভাগ গুলি হলো – দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ, চতুর্থী তৎপুরুষ, পঞ্চমী তৎপুরুষ, ষষ্ঠী তৎপুরুষ এবং সপ্তমী তৎপুরুষ।এই ছয়প্রকার ছাড়াও তৎপুরুষ সমাসকে আরও তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে  তিনটি ভাগ হলো উপপদ তৎপুরুষ, নঞ তৎপুরুষ, এবং অলুক তৎপুরুষ। তৎপুরুষ সমাসকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই ভাগগুলির বিষয়ে জেনে রাখা ভালো, এইগুলি তৎপুরুষ সমাস চিনতে এবং নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস (Dwitia Tatpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তি “কে”, “রে” (কর্ম) যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. গাকে ধোয়া = গাধোয়া (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “গা” এর সঙ্গে দ্বিতীয়া বিভক্তি “কে” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “গাধোয়া” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “ধোয়া” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “গাধোয়া” বললে পূর্বপদ “গা” অর্থাৎ শরীর কে বুঝি না, “গাধোয়া” বললে আমরা এর পরপদ “ধোয়া” কেই বুঝি, “গাধোয়া” বলতে আমরা “গা” বা শরীর বুঝি না, আমরা এখানে স্নান করা বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. দেশকে ভাগ = দেশভাগ (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “দেশ” এর সঙ্গে দ্বিতীয়া বিভক্তি “কে” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “দেশভাগ” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “ভাগ” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “দেশভাগ” বললে পূর্বপদ “দেশ” কে বুঝি না, “দেশভাগ” বললে আমরা এর পরপদ “ভাগ” কেই বুঝি। কোনো ব্যক্তি যদি বলে যে “দেশভাগের সময় আমার জন্ম হয়েছিল” তাহলে আমরা ওই ব্যক্তির জন্ম দেশে হয়েছিল বা দেশের সময় হয়েছিল এরকম কিছু বুঝি না, আমরা এখানে ব্যক্তিটির জন্ম দেশ যখন ভাগ হয়েছিল তখন হয়েছে বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।)

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস (Tritia Tatpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি “দ্বারা”, “দিয়া”, “কর্তৃক” (করণ) যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. দা দিয়া কাটা = দাকাটা (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “দা” এর সঙ্গে দ্বিতীয়া বিভক্তি “দিয়া” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “দাকাটা” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “কাটা” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “দাকাটা” বললে পূর্বপদ “দা” কে বুঝি না, “দাকাটা” বললে আমরা এর পরপদ “কাটা” কেই বুঝি। “দাকাটা” বলতে আমরা “দা” বুঝি না, আমরা এখানে এমন কোনো কিছুকে বুঝি যা দা দিয়ে কাটা হয়েছে, কাটা না থাকলে “দাকাটা” বলাই হতো না তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. বজ্র দ্বারা আহত = বজ্রাহত (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “বজ্র” এর সঙ্গে দ্বিতীয়া বিভক্তি “দ্বারা” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “বজ্রাহত” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “আহত” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “বজ্রাহত” বললে পূর্বপদ “বজ্র” কে বুঝি না, “বজ্রাহত” বললে আমরা এর পরপদ “আহত” হওয়াটা কেই বুঝি। “বজ্রাহত” বলতে আমরা “বজ্র” বুঝি না, আমরা এখানে বজ্রের আঘাতে আহত হয়েছেন এমন কাউকে বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।)

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস (Choturthi Tatpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদের পর চতুর্থী বিভক্তি “কে”, “রে” (সম্প্রদান- স্বত্ব ত্যাগ করে অর্থে)/ “নিমিত্ত”, “জন্য” যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. ধর্মের নিমিত্ত পত্নী = ধর্মপত্নী (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “ধর্ম” এর পর “নিমিত্ত” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেটি বিলুপ্ত হয়ে “ধর্মপত্নী” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “পত্নী ” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ “ধর্মপত্নী ” বললে আমরা পূর্বপদ “ধর্ম” কে বুঝি না, “ধর্মপত্নী” বললে আমরা এর পরপদ “পত্নী ” কেই বুঝি, তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. বিয়ের জন্য পাগল = বিয়েপাগলা (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “বিয়ে” এর পর “জন্য” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেটি বিলুপ্ত হয়ে “বিয়েপাগলা” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “পাগল” শব্দটাই অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ “বিয়েপাগলা” বললে আমরা পূর্বপদ “বিয়ে” কে বুঝি না, “বিয়েপাগলা” বললে আমরা এমন কাউকে বুঝি যে পাগল হয়ে রয়েছে বিয়ে করার জন্য, তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস (Ponchomi Tatpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি “হতে”, “থেকে”, “চেয়ে” (অপাদান) যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. যুদ্ধ থেকে বিরতি = যুদ্ধবিরতি (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “যুদ্ধ” এর পর পঞ্চমী বিভক্তি “থেকে” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “যুদ্ধবিরতি” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “বিরতি” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “যুদ্ধবিরতি” বললে পূর্বপদ “যুদ্ধ” কে বুঝি না, “যুদ্ধবিরতি” বললে আমরা এর পরপদ “বিরতি” কেই বুঝি, “যুদ্ধবিরতি” বলতে আমরা কোনো যুদ্ধ থেকে বিরতি নেওয়া হয়েছে সেটাকেই বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. বাহির হতে আগত = বহিরাগত (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “বাহির” এর পর পঞ্চমী বিভক্তি “হতে” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “বহিরাগত” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “আগত” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “বহিরাগত” বললে পূর্বপদ “বাহির” কে বুঝি না, “বহিরাগত” বললে আমরা এর পরপদ “আগত” কেই বুঝি, “বহিরাগত” বলতে আমরা এমন কাউকে বুঝি যিনি বাহিরে কোথাও থেকে আগত হয়েছেন বা এসেছেন তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস (Sosthi Tatpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তি “র”, “এর” (সম্বন্ধ বোঝাতে) যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. বনের ফুল = বনফুল (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “বন” এর সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি “এর” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “বনফুল” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “ফুল” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “বনফুল” বললে পূর্বপদ “বন” অর্থাৎ কোনো জঙ্গল কে বুঝি না, “বনফুল” বললে আমরা এর পরপদ “ফুল” কেই বুঝি, “বনফুল” বলতে আমরা “বন” বা জঙ্গল বুঝি না, আমরা এখানে ফোটে এমন কোনো ফুল কে বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. গঙ্গার জল = গঙ্গাজল (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “গঙ্গা” এর সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি “র” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “গঙ্গাজল” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “জল” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “গঙ্গাজল” বললে পূর্বপদ “গঙ্গা” নদী কে বুঝি না, “গঙ্গাজল” বললে আমরা এর পরপদ “জল” কেই বুঝি, “বনফুল” বলতে আমরা গঙ্গা নদীর জলকেই বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস (Saptami Totpurus Somas)

যে সকল তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি “এ”, “তে”, “য়” (অধিকরণে তৎপুরুষ) যুক্ত থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর সেই বিভক্তি লুপ্ত হয়ে তা পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন – 

১. সাহিত্যে সম্রাট = সাহিত্যসম্রাট (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “সাহিত্য” এর সঙ্গে সপ্তমী বিভক্তি “এ” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি লুপ্ত হয়ে “সাহিত্যসম্রাট” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “সম্রাট” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “সাহিত্যসম্রাট” বললে পূর্বপদ “সাহিত্য” কে বুঝি না, “সাহিত্যসম্রাট” বললে আমরা এর পরপদ “সম্রাট” কেই বুঝি, “সাহিত্যসম্রাট” বলতে আমরা কোনো ভাষা বা সাহিত্যে সুদক্ষ কোনো ব্যক্তিকে বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।)

২. গলায় ধাক্কা =গলাধাক্কা (এখানে এর ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ “গলা” এর সঙ্গে সপ্তমী বিভক্তি “য়” যুক্ত আছে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর বিভক্তি বিলুপ্ত হয়ে “গলাধাক্কা” হয়েছে এবং একইসঙ্গে এই সমাসটিতে এর পরপদ “ধাক্কা” অধিক প্রাধান্য পেয়েছে কারণ আমরা “গলাধাক্কা” বললে পূর্বপদ “গলা” কে বুঝি না, “গলাধাক্কা” বললে আমরা এর পরপদ “ধাক্কা” কেই বুঝি, “গলাধাক্কা” বলতে আমরা কারো গলায় ধরে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে বুঝি তাই এখানে পরপদে প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।)


Spread the love

1 thought on “সহজে শিখি সমাস | কর্মধারয় সমাস ও তৎপুরুষ সমাস (Karmadharoy, Tatpurus Somas)”

  1. Heya i’m for the first time here. I came across this board and
    I in finding It truly useful & it helped me out much. I am hoping to give something back and help others such as you helped me.

    Reply

Leave a Comment