সকল শিক্ষক শিক্ষিকাগণই শ্রেণীকক্ষে পাঠদানকালে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষন পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন শিক্ষা প্রণালীকে আরও সহজ করে তোলার জন্য। শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত ছাত্র ছাত্রীরা যাতে প্রতিদিনের পাঠগুলি অনায়াসে আয়ত্ত করতে পারে এর জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাগন পাঠ্য বিষয় কে সহজ থেকে সহজতর করে তোলার জন্য শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কালে বিভিন্ন ধরণের আলাদা আলাদা শিক্ষন পদ্ধতির সহায়তা নিয়ে থাকেন, আলোচনা পদ্ধতি বা Discussion Method হলো এর মধ্যে একটি অন্যতম শিক্ষন পদ্ধতি।
Page Contents
What is Discussion Method ?
আলোচনা পদ্ধতি কি ?
আলোচনা পদ্ধতি (Discussion Method) হলো এমন এক শিক্ষন পদ্ধতি যা শিক্ষক শিক্ষিকাগন শ্রেণীকক্ষে আলোচনার মাধ্যমে পাঠদান করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন অর্থাৎ বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করার সময় শিক্ষক শিক্ষিকাগন যখন পাঠের বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে বুঝিয়ে থাকেন তখন সেটাকে Discussion Method বা আলোচনা পদ্ধতি বলে।
আলোচনা পদ্ধতি (Discussion Method) তে কিভাবে পাঠদান করা হয় ?
আলোচনা পদ্ধতিতে শ্রেণীকক্ষে পাঠ্যবিষয় গুলি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।অন্যভাবে বলতে গেলে পাঠ্যপুস্তকের কোনো বিষয় পড়ানোর ও বোঝানোর জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাগন যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেই বিষয়টি সম্পর্কে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পড়িয়ে ও বুঝিয়ে থাকেন, তখন তাকে আলোচনা পদ্ধতি বা ডিসকাশন মেথড বলা হয়।
Related Post : Teachers Diary in Bengali Language
What are the Advantages of Discussion Method ?
আলোচনা পদ্ধতির সুবিধাগুলি কি কি ?
শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কালে আলোচনা পদ্ধতি ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা আছে, এর মধ্যে কিছু সুবিধার কথা নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. এটি শিক্ষকের শিক্ষকতার চাইতে শিক্ষার্থীর শিক্ষনের উপর বেশি জোর দেয় :-
আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষকদের বক্তৃতা (Lecturing) দেওয়ার মাধ্যমে পড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয় না, এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয় এবং তাই এই পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষকগণ একজন গাইড হিসাবে পাঠ্যবিষয়ের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনার বিষয় নির্বাচন করে থাকেন এবং সেই আলোচনায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা কতটুকু সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে থাকেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য পাঠ্যবিষয়ের উপর বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়।
২. এটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক :-
যেহেতু আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবিষয়ের উপর আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয় তাই এই পদ্ধতিটি হলো শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এবং আমরা সকলেই জানি যে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রণালীই বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে।
৩. এটিতে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে :-
বিদ্যালয় শ্রেণীকক্ষে সকল শিক্ষার্থীরা সমান থাকে না, সকল শিক্ষার্থীর বুদ্ধাঙ্কও সমান থাকে না, কিছু শিক্ষার্থী খুব প্রখর ও বুদ্ধিমান হয় কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী খুব শ্লথ গতি (Slow Learner) সম্পন্ন হয়, কিছু শিক্ষার্থী সবকিছুতে আগে এগিয়ে আসে কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী আবার লাজুক স্বভাবেরও হয়।এছাড়াও অনেক বিদ্যালয়ে CWSN শিক্ষার্থীও থাকে। এই সকল শিক্ষার্থীরা অনেক সময় শিক্ষন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না তাই প্রখর আর বুদ্ধাঙ্ক বেশি থাকা শিক্ষার্থীরা শিক্ষন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে গেলেও শ্লথ ও লাজুক স্বভাবের শিক্ষার্থীরা সেই অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারে না কিন্তু আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষন প্রক্রিয়ায় সকল শিক্ষার্থীরাই সমান অধিকার পেয়ে থাকে এবং সমান ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে এবং নিজেদের পছন্দ ও চিন্তাধারার কথা সহপাঠীদের সম্মুখে তুলে ধরতেও পারে ।
৪. এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটায় :-
আলোচনা পদ্ধতিতে বিদ্যালয় শ্রেণীকক্ষে পাঠ্যবিষয় সম্বন্ধীয় বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে থাকে। এখানে শিক্ষার্থীদের মতামত, চিন্তাধারা, কল্পনা, ধারণা সবকিছুতেই সকলকে সমান অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে, সকল শিক্ষার্থীর ধারণা ও মতামতকে সমমর্যাদা দেওয়া হয় তাই সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহায়তা ও সহযোগিতামূলক মনোভাবেরও বিকাশ ঘটে থাকে।
৫. এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল করে তোলে এবং শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটায় : –
আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা যখন কোনো বিষয়ের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে তখন তারা সেই বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে থাকে এবং আলোচনার বিষয়টি যদি কোনো সমস্যাজনিত বিষয় হয় তবে শিক্ষার্থীরা সেই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য নিজেদের কল্পনাশক্তির প্রয়োগ করে থাকে যার ফলে তাদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে এবং তারা যে কোনো বিষয়ে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়।
৬. এটি শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশে সহায়তা করে :-
আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয় তাই শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং নিজেদের মতামত ও পছন্দের কথা সকলের সম্মুখে তুলে ধরে থাকে। এর ফলে যে সব শিক্ষার্থীরা লাজুক স্বভাবের থাকে বা কম বুদ্ধ্যঙ্কসম্পন্ন থাকে তারাও অন্যান্য প্রখর ও তীব্র বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মতো সমান অধিকার পেয়ে থাকে এবং তাদের মতামতেরও সমমর্যাদা পেয়ে থাকে। সেই কারণে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীরাই নিজেদের পছন্দ অপছন্দের কথা বা কোনো বিষয়ে নিজেদের মতামতের কথা অনায়াসে সকলের সম্মুখে প্রকাশ করতে পারে এবং এর ফলে অন্য সকলের মতো লাজুক প্রকৃতির শিক্ষার্থীরাও আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়ে উঠে।
৭. এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা বাড়ায় :-
আলোচনা পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থী যখন আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করে থাকে তখন তারা নিজেদের পছন্দ ও মতামতের সঙ্গে অন্যান্য সব শিক্ষার্থীর পছন্দ ও মতামতের মিল বা অমিল কি তা বুঝতে পারে। আলোচনার সময় একজন শিক্ষার্থীর মতের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীর মতামতের সাদৃশ্য বা মিল থাকলে তো ঠিক আছে কিন্তু মতামতের যদি অমিল থাকে তখন শিক্ষার্থিরা অন্যের মতামত অপ্রীতিকর হলেও বা অন্যের মতের সঙ্গে হাজার মতবিরোধ থাকলেও তা তারা সহ্য করতে শেখে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সহিষ্ণুতা বাড়ে এবং তাদের মধ্যে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধা মনোভাব বিকশিত হয় ।
৮. এটি শিক্ষন প্রণালীকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে :-
যেহেতু আলোচনা পদ্ধতিতে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়ের উপর আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয় তাই এই পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষন প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি কার্যকরী করে তোলে। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে উঠে। শিক্ষার্থীরা আলোচনার মাধ্যমে, নিজের মতামত প্রকাশ করার মাধ্যমে এবং অন্যের মতামতের সঙ্গে নিজের মতের মিল বা অমিল বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত পাঠ্যবিষয়ের উপর জ্ঞান আহরণ করে থাকে এবং এর জন্যই এই পদ্ধতিটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।
What are the Disadvantages of Discussion Method ?
আলোচনা পদ্ধতির অসুবিধাগুলি কি কি ?
শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কালে আলোচনা পদ্ধতি ব্যবহারের যেভাবে বেশ কিছু সুবিধা আছে, ঠিক সেভাবেই এর মধ্যে কিছু অসুবিধাও আছে। এই অসুবিধা গুলির কথা নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. এটি খুব সময়বহুল শিক্ষণ পদ্ধতি:-
যেহেতু আলোচনা পদ্ধতিতে সকল শিক্ষার্থীকে পাঠ্য বিষয় সম্বন্ধীয় বিভিন্ন বিষয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হয় তাই এই ধরণের আলোচনায় অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রতিজন শিক্ষার্থী যখন নিজেদের চিন্তাধারা ও মতামত সবার সামনে তুলে ধরে তখন বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। একটি শ্রেণীকক্ষে যদি ২০ জন শিক্ষার্থী থাকে এবং প্রত্যেকে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে যদি দুই মিনিট করেও সময় নিয়ে থাকে তবুও ৪০ মিনিট সময়ের প্রয়োজন।
২. এই পদ্ধতিতে সকল বিষয় পড়ানো যায় না :
এমন অনেকগুলি বিষয় আছে যা আলোচনা পদ্ধতিতে করানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যেমন বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো টপিক যেখানে কোনো কাজ করে দেখতে হয়, এই ধরণের টপিকগুলো আলোচনা পদ্ধতিতে করানো সম্ভব নয়। এছাড়াও বাংলা বা ইংরেজি বিষয়ের কোনো কবিতা আবৃত্তি বা বোঝানোর ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না।
৩. এই পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীর বিষয়বস্তুর উপর সাধারণ জ্ঞান থাকতে হয়:-
যে কোনো বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে হলে শিক্ষার্থীর সেই বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকাটা খুব প্রয়োজন, তা না হলে শিক্ষার্থীরা সেই বিষয়ে মতামত দিতে অসমর্থ থাকবে এবং সেই কারণে শিক্ষার্থীর আলোচনার বিষয়বস্তুর উপর সাধারণ ধারণা না থাকলে আলোচনা পদ্ধতি ব্যবহার করা কোনোভাবেই সম্ভবপর নয়।
৪. অন্যান্য অসুবিধা সমূহ :-
আলোচনা পদ্ধতি ছোট শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকরী হয় না। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে অনেকসময় শিক্ষার্থীরা আলোচনা করতে করলে মতবিরোধ এর কারণে ঝগড়াও শুরু করে দেয়।
Thank you!!1
Pleasure is mine
Dear Friend,
I have a matter that requires your urgent attention , kindly write me on below email for further discuss.
dilalahmed1965@gmail.com