বাংলা ব্যাকরণের সমাস বিষয়ের উপর তৈরী করা আজকের এই টিউটোরিয়ালটিতে আমি আপনাদের স্বাগত জানাই। এটি হলো Somas Tutorial Series এর তৃতীয় টিউটোরিয়াল আর্টিকেল। এর আগের টিউটোরিয়াল গুলোর মধ্যে প্রথম টিউটোরিয়ালটিতে আমরা সমাস কি তা বিস্তারিতভাবে জেনেছিলাম, একইসঙ্গে সমাসের বিভিন্ন অংশ যেমন ব্যাসবাক্য, সমস্তপদ, সমস্যমানপদ, পূর্বপদ উত্তরপদ ইত্যাদির বিষয়েও বিস্তারিতভাবে পড়েছিলাম এবং সমাসের বিভিন্ন প্রকারের বিষয়েও অবগত হয়েছিলাম এবং দ্বিতীয় টিউটোরিয়ালটিতে আমরা দ্বন্দ্ব সমাস ও অব্যয়ীভাব সমাসের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে পড়েছিলাম এবং এইগুলি কিভাবে নির্ণয় করতে হয় তাও জেনেছিলাম।
তো আজকের এই টিউটোরিয়াল টিতে আমরা সমাসের ছয়টি প্রকারের মধ্যে দ্বিগু সমাস ও বহুব্রীহি সমাস (Digu Somas and Bohubrihi Somas) এই দুইটি প্রকারের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো, বুঝবো এবং শিখবো। তবে সমাস সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা না থাকলে আজকের টিউটোরিয়ালটি কোনোভাবেই বুঝে ওঠা সম্ভবপর নয় তাই তোমাদের মধ্যে যারা এখনো সমাসের প্রথম টিউটোরিয়াল আর্টিকেলটি এখনো পড়ো নি তারা এই লিংকে ক্লিক করে আগে সেটা পড়ে নাও, কারণ ওই টিউটোরিয়ালটি পড়ে নিলে আজকের এই টিউটোরিয়ালটি খুব সহজেই তোমরা বুঝে নিতে পারবে।
Page Contents
দ্বিগু সমাস (Digu Somas)
দ্বিগু সমাসে পরপদে প্রাধান্য পায় এবং এই সমাসের শুরুতে সংখ্যা থাকে অর্থাৎ যে সমাসের শুরুতে সংখ্যা থাকে বা সংখ্যজাতীয় কিছু থাকে এবং এর সমাসে পরপদ বা উত্তরপদের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
উদাহরণস্বরূপ —
১. চারটি রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা (এখানে “চৌ” হলো পূর্বপদ এবং “রাস্তা” হলো পরপদ। এখানে “চৌ” শব্দের দ্বারা সংখ্যা চার কে বোঝানো হয়েছে আর “রাস্তা” শব্দের দ্বারা রাস্তাকে বোঝানো হয়েছে কিন্তু এখানে চৌরাস্তা বলতে আমরা কিন্তু সংখ্যা চার কে বুঝি না, চৌরাস্তা বলতে আমরা কোনো রাস্তাকেই বুঝি তাই এখানে পরপদই প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক কিছু থাকে এবং সেটি পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে।)
২. পঞ্চবটের সমাহার = পঞ্চবটী (এখানে “পঞ্চ” হলো পূর্বপদ এবং “বটী” হলো পরপদ। এখানে “পঞ্চ” শব্দের দ্বারা সংখ্যা পাঁচ কে বোঝানো হয়েছে আর “বটী” শব্দের দ্বারা বট গাছ কে বোঝানো হয়েছে কিন্তু এখানে পঞ্চবটী বলতে আমরা কিন্তু সংখ্যা পাঁচ কে বুঝি না, পঞ্চবটী বলতে আমরা বটগাছকেই বুঝি তাই এখানে পরপদই প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক কিছু থাকে এবং সেটি পরপদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে।)
দ্বিগু সমাসের প্রকার (Types of Digu Somas)
সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদের অর্থ এবং পূর্বপদ ও পরপদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দ্বিগু সমাসকে দুই টি ভাগে ভাগ করা করা হয়েছে। যদিও এই ভাগগুলির সমাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকে না কিন্তু তবুও দ্বিগু সমাসকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই ভাগগুলির বিষয়ে জেনে রাখা ভালো, এইগুলি দ্বিগু সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস (Todwitarthok Digu Somas)
যে সকল দ্বিগু সমাসে অর্থের বিনিময়ে কোনোকিছু কেনা হয়েছে বোঝাতে বা কোনো তদ্ধিতান্ত শব্দ বোঝাতে সংখ্যাবাচক পূর্বপদ দেওয়া থাকে তাকে তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস বলে। এই সমাসের ব্যাসবাক্যে একটি সংখ্যাবাচক শব্দ থাকার পাশাপাশি “ক্রীত”, “যাহার” ইত্যাদি শব্দ দেওয়া থাকে। যেমন –
১. সাতটি কড়ির বিনিময়ে ক্রীত = সাতকড়ি (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদে একটি সংখ্যা “সাত” আছে এবং এর পরপদ “কড়ি” এর দ্বারা কোনোকিছু কেনা হয়েছে বোঝাচ্ছে এবং এর ব্যাসবাক্যে “ক্রীত” শব্দটিও বিদ্যমান আছে তাই এটি হলো তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস।)
২. দুই মাতা যাহার = দ্বৈমাতুর (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদ “দ্বৈ” বলতে সংখ্যা দুই বোঝাচ্ছে এবং এর ব্যাসবাক্যে “যাহার” শব্দটিও বিদ্যমান আছে তাই এটি হলো তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস।)
৩. তিনটি কড়ির বিনিময়ে ক্রীত = তিনকড়ি (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদে একটি সংখ্যা “তিন” আছে এবং এর পরপদ “কড়ি” এর দ্বারা কোনোকিছু কেনা হয়েছে বোঝাচ্ছে এবং এর ব্যাসবাক্যে “ক্রীত” শব্দটিও বিদ্যমান আছে তাই এটি হলো তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস।)
সমাহারার্থক দ্বিগু সমাস (Somohararthok Digu Somas)
যে সকল সমাসের পূর্বপদে কোনো সংখ্যা থাকে বা সংখ্যাবাচক কিছু থাকে এবং তা কোনোকিছুর সমাহার বা সমষ্টি কে বোঝায় তাকে সমাহারার্থক দ্বিগু সমাসে বলে। যেমন –
১. তিন পদের সমাহার = ত্রিপদী (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদে “ত্রি” দ্বারা সংখ্যা তিন কে বোঝানো হয়েছে এবং এটিতে পদের সমাহার বা সমষ্টি বোঝাচ্ছে , তাই এটি হলো সমহারার্থক দ্বিগু সমাস।)
২. পঞ্চ নদের সমাহার = পঞ্চনদ (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদে “পঞ্চ” দ্বারা সংখ্যা পাঁচ কে বোঝানো হয়েছে এবং এটিতে নদের সমাহার বা সমষ্টি বোঝাচ্ছে , তাই এটি হলো সমহারার্থক দ্বিগু সমাস।)
৩. সাত সমুদ্রের সমাহার = সাতসমুদ্র (এই দ্বিগু সমাসের পূর্বপদে “সাত” দ্বারা সংখ্যা সাত কে বোঝানো হয়েছে এবং এটিতে সমুদ্রের সমাহার বা সমষ্টি বোঝাচ্ছে , তাই এটি হলো সমহারার্থক দ্বিগু সমাস।)
দ্বিগু সমাস (Digu Somas) চেনার উপায়
- দ্বিগু সমাসে পূর্বপদে সংখ্যা থাকে বা সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে।
- দ্বিগু সমাসে পরপদে প্রাধান্য পায়।
- অধিকাংশ দ্বিগু সমাসের ব্যাসবাক্যে “সমষ্টি” বা “সমাহার” শব্দ যুক্ত থাকে। (বেশিরভাগ দ্বিগু সমাসের ব্যাসবাক্যে “সমাহার” যুক্ত থাকে)
বহুব্রীহি সমাস (Bohubrihi Somas)
বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ের মধ্যে কোনোটাই প্রাধান্য পায় না, এখানে একটি নতুন অর্থ প্রাধান্য পায় অর্থাৎ বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ উভয় পদেরই কোনো গুরুত্ব থাকে এবং এখানে একটি নতুন অর্থের পদ প্রাধান্য পায় । উদাহরণস্বরূপ —
১. বীণা পাণিতে যাহার = বীণাপাণি (এখানে “বীণা” হলো পূর্বপদ এবং “পাণি” হলো উত্তরপদ বা পরপদ । কিন্তু এটির সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ কোনোটাই প্রাধান্য পায়নি, কারণ এখানে পূর্বপদ “বীণা” এর অর্থ হলো একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র বিশেষ এবং পরপদ “পাণি” এর অর্থ হলো হাত কিন্তু এর সমাস “বীণাপাণি” শব্দের অর্থ বাদ্যযন্ত্রও নয় আর হাতও নয়, বীণাপাণি বলতে আমরা বাদ্যযন্ত্রও বুঝি না বা হাতও বুঝি না এখানে “বীণাপাণি” বলতে আমরা একটি নতুন অর্থ পাই এবং সেই অর্থ হলো দেবী সরস্বতী। তো এখানে আমরা দেখতে পেলাম যে এখানে পূর্বপদ ও পরপদের কোনোটাই প্রাধান্য পায় নি, এখানে একটি নতুন অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ উভয়পদেরই প্রাধান্য থাকে না এবং একটি নতুন পদের প্রাধান্য পায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।)
২. গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়ে-হলুদ (এখানে “গায়ে” হলো পূর্বপদ এবং “হলুদ” হলো উত্তরপদ বা পরপদ । কিন্তু এটির সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ কোনোটাই প্রাধান্য পায়নি, কারণ এখানে পূর্বপদ “গায়ে” এর অর্থ হলো দেহ বা শরীর এবং পরপদ “হলুদ” এর অর্থ হলো একপ্রকার রং বা একপ্রকার মশলা কিন্তু এর সমাস “গায়ে-হলুদ” শব্দের অর্থ দেহ বা শরীরও নয় আর কোনোপ্রকার রং বা মশলাও নয়, গায়ে-হলুদ বলতে আমরা শরীরও বুঝি না বা মশলাও বুঝি না এখানে “গায়ে-হলুদ” বলতে আমরা একটি নতুন অর্থ পাই এবং সেই অর্থ হলো বিয়ের আগে হওয়া একটি অনুষ্ঠান।)
বহুব্রীহি সমাসের প্রকার (Types of Bohubrihi Somas)
ব্যাসবাক্যের গঠন, সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদের অর্থ এবং পূর্বপদ ও পরপদের প্রকার ও সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বহুব্রীহি সমাসকে আট টি ভাগে ভাগ করা করা হয়েছে। যদিও এই ভাগগুলির সমাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকে না কিন্তু তবুও বহুব্রীহি সমাসকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই ভাগগুলির বিষয়ে জেনে রাখা ভালো, এইগুলি বহুব্রীহি সমাস চিনতে এবং তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস (Somanadhikoron Bohubrihi Somas)
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে একটি বিশেষ্য এবং অন্যটি বিশেষণ থাকে তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। অর্থাৎ যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে একটিতে নামবাচক শব্দ থাকে এবং অন্যটিতে সেই নামবাচক শব্দের কোনো দোষ, গুণ বা অন্য কোনো বিশেষতা বোঝানো হয় তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। যেমন –
১. সুন্দর যার স্ত্রী = সুশ্রী (এই বহুব্রীহি সমাসে “সুন্দর” বিশেষণ পদটির দ্বারা “স্ত্রী” এর গুণ বোঝানো হয়েছে তাই এটি হলো সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস।)
২. নীল কণ্ঠ যাহার = নীলকণ্ঠ (এই বহুব্রীহি সমাসে “নীল” পদটি বিশেষণ হিসাবে ব্যবহৃত করে “কণ্ঠে” নীল আছে যার তাকে বোঝানো হয়েছে এবং এটি তার একটি গুণ হিসাবে বোঝানো হয়েছে তাই এটি হলো সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস।)
ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস (Byadhikoron Bohubrihi Somas)
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের উভয়েই বিশেষ্য থাকে তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে।ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের পরপদে সর্বদা সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়) যুক্ত থাকে। যেমন –
১. চন্দ্র চূড়ায় যাহার = চন্দ্রচূড় (এই বহুব্রীহি সমাসে “চন্দ্র” ও “চূড়া” দুইটি বিশেষ্যপদের ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এখানে চন্দ্রচূড় বলতে আমরা পূর্বপদ “চন্দ্র”ও বুঝি না বা পরপদ “চূড়া”ও বুঝি না, এখানে চন্দ্রচূড় বলতে একটি নতুন অর্থ বোঝানো হয়েছে এবং তা হলো “ভগবান শিব”। একইসঙ্গে ব্যাসবাকের পরপদে অর্থাৎ “চূড়া” শব্দের শেষে সপ্তমী বিভক্তি “য়” যুক্ত আছে।)
২. বীণা পাণিতে যাহার = বীণাপাণি (এই বহুব্রীহি সমাসে “বীণা” ও “পাণি” দুইটি বিশেষ্যপদের ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এখানে বীণাপাণি বলতে আমরা পূর্বপদ “বীণা”ও বুঝি না বা পরপদ “পাণি”ও বুঝি না, এখানে বীণাপাণি বলতে একটি নতুন অর্থ বোঝানো হয়েছে এবং তা হলো “দেবী সরস্বতী”। একইসঙ্গে ব্যাসবাকের পরপদে অর্থাৎ “পাণি” শব্দের শেষে সপ্তমী বিভক্তি “এ” যুক্ত আছে।)
বহুব্রীহি সমাস (Bohubrihi Somas) চেনার উপায় :
- বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়েরই প্রাধান্য থাকে না, এখানে একটি নতুন অর্থ প্রাধান্য পায়।
- বেশিরভাগ বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যের পরপদে সর্বদা সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়) যুক্ত থাকে।
সেতার কোন সমাস..explain plz