এটি হলো বাংলা ব্যাকরণের সমাস বিষয়ের উপর দ্বিতীয় টিউটোরিয়াল অর্থাৎ Somas Tutorial Series এর এটি দ্বিতীয় টিউটোরিয়াল আর্টিকেল, এর আগের টিউটোরিয়ালে আমরা সমাস কি তা বিস্তারিতভাবে জেনেছিলাম, একইসঙ্গে সমাসের বিভিন্ন অংশ যেমন ব্যাসবাক্য, সমস্তপদ, সমস্যমানপদ, পূর্বপদ উত্তরপদ ইত্যাদির বিষয়েও পড়েছিলাম এবং সমাসের বিভিন্ন প্রকারে বিষয়েও অবগত হয়েছিলাম। কিন্তু Somas Tutorial Series এর প্রথম টিউটোরিয়ালটিতে আমরা সমাসের প্রকারগুলোর বিষয়ে শুধুমাত্র প্রাথমিক আলোচনা করেছিলাম যাতে সমাসের সেই প্রকারগুলোর বিষয়ে আমরা এক প্রাথমিক ধারণা পেতে পারি।
তো আজকের এই টিউটোরিয়াল টিতে আমরা সমাসের ছয়টি প্রকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাস ও অব্যয়ীভাব সমাস (Dando Somas and Obyoyivab Somas) এই দুইটি প্রকারের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো, বুঝবো এবং শিখবো। তবে সমাসের সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা না থাকলে আজকের টিউটোরিয়ালটি কোনোভাবেই বুঝে ওঠা সম্ভবপর নয় তাই তোমাদের মধ্যে যারা এখনো সমাসের প্রথম টিউটোরিয়াল আর্টিকেলটি এখনো পড়ো নি তারা এই লিংকে ক্লিক করে আগে সেটা পড়ে নাও, কারণ ওই টিউটোরিয়ালটি পড়ে নিলে আজকের এই টিউটোরিয়ালটি খুব সহজেই তোমরা বুঝে নিতে পারবে।
Page Contents
দ্বন্দ্ব সমাস (Dando Somas)
দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ই সমান প্রাধান্য পায় অর্থাৎ দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ উভয় পদেরই সমান গুরুত্ব থাকে। উদাহরণস্বরূপ —
১. সুখ ও দুঃখ = সুখদুঃখ (এখানে “সুখ” হলো পূর্বপদ এবং “দুঃখ” হলো পরপদ। এখানে সুখ ও দুঃখ উভয়পদেরই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুখদুঃখ বলতে আমরা “সুখ” ও “দুঃখ” দুইটাকেই বুঝি তাই এখানে উভয়পদই সমান প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে উভয়পদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।)
২. ছেলে ও মেয়ে = ছেলেমেয়ে (এখানে “ছেলে” হলো পূর্বপদ এবং “মেয়ে” হলো উত্তরপদ বা পরপদ । এখানে ছেলে ও মেয়ে উভয়পদেরই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছেলেমেয়ে বলতে আমরা “ছেলে” ও “মেয়ে” দুইটাকেই বুঝি তাই এখানে উভয়পদই সমান প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে উভয়পদে প্রাধান্য পায় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।)
দ্বন্দ্ব সমাসের প্রকার (Types of Dando Somas):
সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদের অর্থ এবং পূর্বপদ ও পরপদের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দ্বন্দ্ব সমাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা করা হয়েছে। যদিও এই ভাগগুলির সমাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকে না কিন্তু তবুও দ্বন্দ্ব সমাসকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এই ভাগগুলির বিষয়ে জেনে রাখা ভালো, এইগুলি দ্বন্দ্ব সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Milonarthok Dando Somas)
যে সকল সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক বোঝায় বা কোনো মিলনার্থক সম্বন্ধ বোঝায় তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে অর্থাৎ যখন বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত বা কোনো মিলনার্থক সম্বন্ধযুক্ত দুইটি পদ মিলে দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয় তখন তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Milonarthok Dando Somas) বলে। যেমন –
১. স্বামী ও স্ত্রী = স্বামীস্ত্রী (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “স্বামী” এবং পরপদ “স্ত্রী” এর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তাই এটি হলো মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
২. মেয়ে ও জামাই = মেয়েজামাই (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “মেয়ে” এবং পরপদ “জামাই” এর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তাই এটি হলো মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
৩. পথ ও ঘাট = পথঘাট (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “পথ” এবং পরপদ “ঘাট” এর মধ্যে একটি মিল পাওয়া যায় বা একটি মিলনার্থক সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়, তাই এটিও হলো মিলনার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Biporitarthok Dando Somas)
যে সকল সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে কোনো বিপরীত অর্থবিশিষ্ট সম্পর্ক আছে বোঝায় তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে অর্থাৎ যখন বিপরীতার্থক সম্পর্কযুক্ত দুইটি পদ মিলে দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয় তখন তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Biporitarthak Dondo Somas) বলে। যেমন –
১. পাপ ও পুণ্য = পাপপুণ্য (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “পাপ” পরপদ “পুণ্য” এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, তাই এটি হলো বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
২. কাঁচা ও পাকা = কাঁচাপাকা (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “কাঁচা” পরপদ “পাকা” এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, তাই এটি হলো বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
৩. জন্ম ও মৃত্যু = জন্মমৃত্যু (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “জন্ম” পরপদ “মৃত্যু” এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, তাই এটিও হলো বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
বিরোধীতার্থক বা বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব সমাস
যে সকল দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে কোনো বিরোধী বা বিকল্পের মতো অর্থবিশিষ্ট সম্পর্ক আছে বোঝায় তাকে বিরোধীতার্থক বা বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে অর্থাৎ যখন বিরোধীতার্থক বা বিকল্পার্থক সম্পর্কযুক্ত দুইটি পদ মিলে দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয় তখন তাকে বিরোধীতার্থক বা বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Birodharthak or Bikolparthok Dando Somas) বলে। যেমন –
১. দা ও কুমড়া = দা-কুমড়া (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “দা” পরপদ “কুমড়া” এর বিরোধী হিসাবে অর্থ প্রকাশ করে (কারণ দা দিয়ে কুমড়া কাটা হয়), তাই এটি হলো বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
অলুক দ্বন্দ্ব সমাস (Aluk Dando Somas)
যে সকল দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের শেষে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং এর সমাসবদ্ধ পদেও সেই বিভক্তি চিহ্ন অক্ষুণ্ন থাকে তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাস বলে অর্থাৎ যে সকল দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ, উত্তরপদ এবং সমাসবদ্ধ পদে বিভক্তি যুক্ত থাকে তাকে অলুক দ্বন্দ্ব সমাস (Aluk Dando Somas) বলে। যেমন –
১. বুকে ও পিঠে = বুকে-পিঠে (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “বুক” এবং পরপদ “পিঠ” এর মধ্যে “এ” বিভক্তি যুক্ত আছে (বুক + এ = বুকে, পিঠ + এ = পিঠে) এবং এর সমাসবদ্ধ পদ “বুকে-পিঠে” তেও “এ” বিভক্তি যুক্ত রয়েছে, তাই এটি হলো অলুক দ্বন্দ্ব সমাস।)
২. দুধে ও ভাতে = দুধেভাতে (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “দুধ” এবং পরপদ “ভাত” এর মধ্যে “এ” বিভক্তি যুক্ত আছে (দুধ + এ = দুধে, ভাত + এ = ভাতে) এবং এর সমাসবদ্ধ পদ “দুধেভাতে” শব্দটিতেও “এ” বিভক্তি যুক্ত রয়েছে, তাই এটি হলো অলুক দ্বন্দ্ব সমাস।)
Please Note:- যে সকল সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদের মধ্যে যেকোনো একটি পদে বা উভয়পদে কোনো বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং সেই বিভক্তি সমাসবদ্ধ পদেও অক্ষুন্ন থাকে সেই সকল সমাসকে অলুক বলা হয়, এবং এইধরণের অলুক- দ্বন্দ্ব সমাস, বহুব্রীহি সমাস এবং তৎপুরুষ সমাসেও আছে।
এবার এই অলুক দ্বন্দ্ব সমাস, অলুক বহুব্রীহি সমাস এবং অলুক তৎপুরুষ সমাসের মধ্যে পার্থক্য হলো :-
- অলুক দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং এর সমাসবদ্ধ পদেও সেই বিভক্তি অক্ষুন্ন থাকে এবং যেহেতু এটি দ্বন্দ্ব সমাসের একটি প্রকার তাই এই সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়পদেরই সমান প্রাধান্য থাকে। যেমন – সাপে ও নেউলে = সাপেনেউলে (এখানে পূর্বপদ “সাপ” এবং পরপদ “নেউল” এর মধ্যে “এ” বিভক্তি যুক্ত আছে এবং এই বিভক্তি এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “সাপেনেউলে” শব্দতেও অক্ষুন্ন রয়েছে এবং যেহেতু এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “সাপেনেউলে” শব্দটির মধ্যে এর পূর্বপদ “সাপ” এবং পরপদ “নেউল” উভয়েরই সমান প্রাধান্য রয়েছে তাই এটিকে অলুক দ্বন্দ্ব বলা হয়)
- অলুক বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে যেকোনো একটি পদে বা উভয়পদে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং এর সমাসবদ্ধ পদেও সেই বিভক্তি অক্ষুন্ন থাকে এবং যেহেতু এটি বহুব্রীহি সমাসের একটি প্রকার তাই এই সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের কোনোটারই প্রাধান্য থাকে না, এই সমাসে একটি নতুন অর্থ প্রাধান্য পায় । যেমন – গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = গায়েহলুদ (এখানে পূর্বপদ “গায়ে” এর মধ্যে “এ” বিভক্তি যুক্ত আছে এবং এই বিভক্তি এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “গায়েহলুদ” শব্দতেও অক্ষুন্ন রয়েছে এবং যেহেতু এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “গায়েহলুদ” শব্দটির মধ্যে এর পূর্বপদ “গায়ে” এবং পরপদ “হলুদ” উভয়ের কোনোটাই প্রাধান্য পায় নি, এখানে গায়েহলুদ বলতে আমরা একই নতুন অর্থ পাই তাই এটিকে অলুক বহুব্রীহি বলা হয়)। (বহুব্রীহি সমাসের বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য এখানে ক্লিক করো।)
- অলুক তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের মধ্যে বিভক্তি যুক্ত থাকে এবং সেই বিভক্তি এর সমাসবদ্ধ পদেও অক্ষুন্ন থাকে এবং যেহেতু এটি তৎপুরুষ সমাসের একটি প্রকার তাই এই সমাসে পূর্বপদের প্রাধান্য থাকে। যেমন – কানে কালা = কানে-কালা (এখানে পূর্বপদ “কান ” এর মধ্যে “এ” বিভক্তি যুক্ত আছে (কান + এ = কানে) এবং এই বিভক্তি এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “কানে-কালা” শব্দতেও অক্ষুন্ন রয়েছে এবং যেহেতু এই সমাসের সমাসবদ্ধ পদ “কানে-কালা” শব্দটির মধ্যে এর পূর্বপদ “কান” শব্দটিই প্রাধান্য পেয়েছে তাই এটিকে অলুক তৎপুরুষ বলা হয়)। (তৎপুরুষ সমাসের বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য এখানে ক্লিক করো।)
সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস (Somarthak Dando Somas)
যে সকল দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে কোনো সহচর অর্থের বা সমান অর্থের সম্পর্ক আছে বোঝায় তাকে সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস বলে। অর্থাৎ যখন দুইটি সমান অর্থবিশিষ্ট বা বন্ধুসুলভ অর্থবিশিষ্ট দুইটি পদ মাইল দ্বন্দ্ব সমাস গঠিত হয় তখন সেটা সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস হয়। যেমন –
১. হাট ও বাজার = হাটবাজার (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “হাট” এবং পরপদ “বাজার” এর অর্থ প্রায় সমান এবং এইদুই পদের মধ্যে একটি বন্ধুসুলভ বা ভাতৃসুলভ সম্বন্ধ লক্ষ্য করা যায়, তাই এটি হলো সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
২. চা ও টা = চা-টা (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “চা” এবং পরপদ “টা” এর অর্থ প্রায় সমান এবং এইদুই পদের মধ্যে একটি বন্ধুসুলভ বা ভাতৃসুলভ সম্বন্ধ লক্ষ্য করা যায়, তাই এটি হলো সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
৩. শাক ও সবজি = শাকসবজি (এই দ্বন্দ্ব সমাসের পূর্বপদ “শাক” এবং পরপদ “সবজি” এর অর্থ প্রায় সমান এবং এইদুই পদের মধ্যে একটি বন্ধুসুলভ বা ভাতৃসুলভ সম্বন্ধ লক্ষ্য করা যায়, তাই এটিও হলো সহচর-অর্থক বা সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস।)
দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায় :
- দ্বন্দ্ব সমাসে উভয়পদ প্রধান হয় অর্থাৎ পূর্বপদ এবং পরপদের সমাসন প্রাধান্য থাকে।
- বেশিরভাগ দ্বন্দ্ব সমাসের সমাসবদ্ধ পদে বা সমস্তপদে হাইফেন (-) চিহ্ন দেওয়া থাকে।
- দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যে “ও”, “এবং”, “আর” এই তিনটি অব্যয়ের যেকোনো একটি যুক্ত থাকে। (বেশিরভাগ দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্যে “ও” যুক্ত থাকে)
Please Note:- কোনো সমাসের পূর্বপদ ও পরপদে যদি দুইটি বিশেষণ থাকে এবং তা কোনো একই ব্যক্তি বা একই বস্তুকে নির্দেশ করে তখন সেই সমাসের ব্যাসবাক্যে “ও”, “এবং” বা “আর” থাকলেও তা দ্বন্দ্ব সমাস হয় না, তা কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন – চালাক ও চতুর = চালাকচতুর (এখানে একজন ব্যক্তির কথাই বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর।)
অব্যয়ীভাব সমাস (Abyoyivab Somas)
যে সমাসে পূর্বপদে একটি অব্যয় (সংস্কৃত উপসর্গ বা যথা) থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর এই অব্যয় পদটির অর্থই প্রধান হয়ে উঠে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে অর্থাৎ অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদ প্রধান হয় এবং সেই পূর্বপদটি একটি অব্যয় পদ হয় (এখানে অব্যয়পদ বলতে সংস্কৃত উপসর্গ বা যথা ব্যবহৃত হয়) । উদাহরণস্বরূপ —
১. ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ (এখানে “দূর” হলো পূর্বপদ যেটি একটি সংস্কৃত উপসর্গ এবং “ভিক্ষা” হলো পরপদ। এখানে “দূর” শব্দের দ্বারা অভাব কে বোঝানো হয়েছে আর “ভিক্ষা” শব্দের দ্বারা ভিক্ষাকে বোঝানো হয়েছে কিন্তু এখানে দুর্ভিক্ষ বলতে আমরা ভিক্ষাকে বুঝি না, দুর্ভিক্ষ বলতে আমরা ভিক্ষার অভাবকে বুঝি তাই এখানে পূর্বপদই প্রাধান্য পেয়েছে আর যে সমাসে পূর্বপদে প্রাধান্য পায় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।)
২. সময়কে অতিক্রম না করে = যথাসময়ে (এখানে “যথা” হলো পূর্বপদ যেটি একটি সংস্কৃত উপসর্গ এবং “সময়” হলো পরপদ। এখানে “যথা” শব্দের দ্বারা সঠিক কে বোঝানো হয়েছে আর “সময়” শব্দের দ্বারা সময়কে বোঝানো হয়েছে কিন্তু এখানে যথাসময়ে বলতে আমরা শুধুমাত্র সময়কে বুঝি না, যথাসময়ে বলতে আমরা সঠিক সময়কে বুঝি তাই এখানে পূর্বপদই প্রাধান্য পেয়েছে।)
অব্যয়ীভাব সমাসের প্রকার :
সাধারণভাবে অব্যয়ীভাব সমাসের আলাদা করে কোনো প্রকার নেই কিন্তু অব্যয়ীভাব সমাসের ব্যাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে নিম্নলিখিত প্রকারগুলি লক্ষ্য করা যায় –
অভাব :- অব্যয়ীভাব সমাসের সমাসবদ্ধপদে বা সমস্তপদে কোনোকিছুর অভাব বোঝানোর জন্য এর পূর্বপদে “দূর”, “নির”, “বে”, “গর” ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত থাকে। যেমন –
নীতির অভাব = দুর্নীতি (দূর + নীতি = দুর্নীতি —- এখানে নীতির অভাব বোঝানোর জন্য সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “দূর” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
বিঘ্নের অভাব = নির্বিঘ্ন (নির + বিঘ্ন = নির্বিঘ্ন —- এখানে বিঘ্নের অভাব বোঝানোর জন্য সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “নির” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
……………………………………………………….
প্রতি :- অব্যয়ীভাব সমাসের সমাসবদ্ধপদে বা সমস্তপদে প্রতিনিয়ত বা ক্রমাগত কোনোকিছু বোঝানোর জন্য এর পূর্বপদে “প্রতি” উপসর্গ যুক্ত করা হয়। যেমন –
দিন দিন = প্রতিদিন (প্রতি + দিন = প্রতিদিন —- এখানে দিনের ধারাবাহিকতা বোঝানোর জন্য সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “প্রতি” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
গৃহে গৃহে = প্রতিগৃহে (প্রতি + গৃহে = প্রতিগৃহে —- এখানে গৃহের ধারাবাহিকতা বোঝানোর জন্য সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “প্রতি” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
……………………………………………………….
যথা :- অব্যয়ীভাব সমাসে কোনোকিছু অনতিক্রম (অতিক্রম না করা) বোঝাতে এর সমাসবদ্ধপদের পূর্বপদে “যথা” যুক্ত করা হয়। যেমন –
সময়কে অতিক্রম না করিয়া = যথাসময় (যথা + সময়ে = যথাসময়ে —- এখানে সময়কে অতিক্রম করা হয়নি বোঝাতে সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “যথা” যুক্ত করা হয়েছে।)
সাধ্যকে অতিক্রম না করিয়া = যথাসাধ্য (যথা + সাধ্য = যথাসাধ্য —- এখানে সাধ্যকে অতিক্রম করা হয়নি বোঝাতে সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “যথা” যুক্ত করা হয়েছে।)
……………………………………………………….
পর্যন্ত :- অব্যয়ীভাব সমাসে কোনোকিছুর সীমা বা প্রান্ত অবধি বোঝানোর জন্য এর ব্যাসবাক্যে “পর্যন্ত” এবং এর সমাসবদ্ধপদের পূর্বপদে “আ” উপসর্গ যুক্ত করা হয়। যেমন –
কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ (আ + কণ্ঠ = আকণ্ঠ —- এখানে কণ্ঠ পর্যন্ত সীমাকে বোঝানোর জন্য এর সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “আ” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
জীবন পর্যন্ত = আজীবন (আ + জীবন = আজীবন —- এখানে জীবনের শেষ সীমা পর্যন্ত বোঝানোর জন্য এর সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “আ” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
……………………………………………………….
সাদৃশ্য/ সামীপ্য :- অব্যয়ীভাব সমাসে কোনোকিছুর সঙ্গে কোনোকিছুর মিল বোঝাতে বা কোনোকিছুর সমজাতীয় অন্য কোনোকিছুকে বোঝাতে বা কোনোকিছুর নিকটবর্তী অন্য কোনোকিছুকে বোঝাতে এর ব্যাসবাক্যে “সদৃশ”, “সমীপে” ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং এর সমাসবদ্ধপদের পূর্বপদে “উপ”, “অনু” ইত্যাদি যুক্ত করা হয়। যেমন –
দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ (উপ + দ্বীপ = উপদ্বীপ —- এখানে কোনো দ্বীপের সঙ্গে মিল থাকা অন্য দ্বীপ বোঝাতে বা দ্বীপের মতো দেখতে অন্য দ্বীপকে বোঝানোর জন্য এর সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “উপ” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
কূলের সমীপে = উপকূল (উপ + কূল = উপকূল —- এখানে কোনো কূলের নিকটবর্তী থাকা অন্য কূল বোঝাতে এর সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “উপ” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
রূপের সদৃশ = অনুরূপ (অনু + রূপ = অনুরূপ —- এখানে কোনো একটি রূপের সঙ্গে মিল থাকা অন্য রূপ বোঝাতে বা রূপের সমজাতীয় অন্য রূপকে বোঝানোর জন্য এর সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে “অনু” উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।)
অব্যয়ীভাব সমাস চেনার উপায় :
- অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদে একটি অব্যয় (সংস্কৃত উপসর্গ বা যথা) থাকে এবং সমাসবদ্ধ হওয়ার পর এই অব্যয় পদ থাকা পূর্বপদের অর্থই প্রধান হয়ে থাকে।
- অব্যয়ীভাব সমাসের সমাসবদ্ধ পদে বা সমস্তপদের শুরুতে কোনো সংস্কৃত উপসর্গ বা “যথা”, “উপ”, “অনু”, “প্রতি” ইত্যাদি যুক্ত থাকে।
- সাধারণত বেশিরভাগ অভয়ভাব সমাসের ব্যাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে “অভাব”, “সদৃশ”, “সমীপে”, “যোগ্য”, “পর্যন্ত”, “অতিক্রম” ইত্যাদি শব্দ যুক্ত থাকে।
………………………………………………………
তো এই ছিল সমাস টিউটোরিয়াল সিরিজের দ্বিতীয় টিউটোরিয়াল আর্টিকেল, এর পরবর্তী টিউটোরিয়ালে আমরা দ্বিগু সমাস এবং বহুব্রীহি সমাসের বিষয়ে পড়বো, জানবো এবং শিখবো। দ্বন্দ্ব সমাস এবং অব্যয়ীভাব সমাসের এই টিউটোরিয়ালটিতে যদি কারো কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারো, আমি চেষ্টা করবো এর সমাধান দেওয়ার। এবং যদি টিউটোরিয়ালটি ভালো লেগে থাকে তাহলেও সেটা নিচে কমেন্ট করে জানাবে এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবে। ধন্যবাদ।
Excellent, what a wweb site it іs! Thiss weblog proνides valuable data tⲟ uѕ, keep іt up.
Hey very nice blog!